বাংলাদেশে ব্যবসা শুরু করবো কিভাবে ?

বাংলাদেশে ব্যবসা শুরু করার ধরণ তিনটি

(১) ব্যক্তি/একক মালিকানায় (Proprietorship) ব্যবসা শুরু করা
(২) যৌথ বা পার্টনারশীপ ফার্ম  (Partnership) ব্যবসা শুরু করা
(৩) প্রাইভেট লিমিটেড  (Limited) কোম্পানি হিসেবে ব্যবসা শুরু করা

+88 0161 333 6 333 | info@supremeip.com

আমরা এই আর্টিক্যালে ব্যবসা শুরুর যে তিনটি ধরণ বলেছি তা আলোচনা করবো, পাশাপাশি এইসব ব্যবসা শুরু করতে কি কি করতে হয় বা খরচ কত এগুলো নিয়ে আলোচনা করব। এরপর কিছু প্রয়োজনীয় লাইসেন্স যেমন ট্রেড লাইসেন্স, এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট লাইসেন্স কিভাবে করতে এবং কত খরচ এসব বিষয়াদি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

 

একক মালিকানাধীন (Proprietorship) ব্যবসা কি?

যে ব্যবসার মালিক শুধুমাত্র একজন থাকে তাকে একক মালিকানাধীন (Proprietorship) ব্যবসা বলে। বাংলাদেশে এটি বেশ জনপ্রিয়। আদিকাল থেকে ব্যবসার এই নীতি চলে আসছে। মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে কোন ব্যাক্তি নিজ দায়িত্বে পুঁজির সংস্থান, পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করে এবং একাই সকল ঝুকি বহন ও একাই সমুদয় মুনাফা ভোগ করে তাকে এক মালিকানা ব্যবসা বলে।

 

অংশীদারিত্ব (Partnership) ব্যবসা কি?

কয়েকজন মিলে যে ব্যবসা শুরু করা হয় তাকে অংশীদারিত্ব বা পার্টনারশিপ ব্যবসা বলে। যে ব্যবসার মালিক একাধিক থাকে তাকে অংশীদারিত্ব (Partnership) ব্যবসা বলে। এ ধরণের ব্যবসাও আমাদের বেশ জনপ্রিয়। যখন একজনের পক্ষে পুঁজি যোগান দেওয়া সম্ভব হয় না তখন কয়েকজন মিলে পুজিঁ যোগান দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করা হয়।

 

লিমিটেড কোম্পানি (Limited Company)

শেয়ার দ্বারা সীমত দায়বদ্ধ করে যে ব্যবসায়িক সংগঠন তৈরি করা হয় তাকে লিমিটেড কোম্পানী বলে। কোম্পানীতে যে যত টাকা বিনিয়োগ করবে তার সেই টাকার উপর দায়বদ্ধ থাকবে। অর্থাৎ শেয়ার দ্বারা ঝুকি সীমাবদ্ধতা করা হয়।কোম্পানীর মুনাফা হলে শেয়ার অনুযায়ী তা ভাগ করা হয় আবার লস হলে শেয়ার অনুযায়ী শেয়ার হোল্ডাররা বহন করে থাকেন। লিমিটেড কোম্পানী দুধরণের হতে পারে। যথা- প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানী ও পাবলিক লিমিটেড কোম্পানী।

 

ক) প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি (Private Limited Company):

যে কোম্পানির সদস্য সংখ্যা সর্বনিম্ন ২ জন এবং সর্বোচ্চ ৫০ জনে সীমাবদ্ধ এবং যার শেয়ার অবাধে হস্তান্তরযােগ্য নয় তাকে প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি বলে । বাংলাদেশে প্রচলিত ১৯৯৪ সালের কোম্পানি আইনে বলা হয়েছে , প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি বলতে এমন কোম্পানিকে বােঝায় যার সদস্য সংখ্যা ৫০ জনে সীমাবদ্ধ , সদস্যদের শেয়ার হস্তান্তর অধিকার সীমিত এবং শেয়ার ও ঋণপত্র ক্রয়ের জন্য জনগণের নিকট আমন্ত্রণ জানানাে নিষিদ্ধ ’ অর্থাৎ কোম্পানির সদস্যগণ শুধু নিজেরাই শেয়ার ক্রয় করতে পারেন । সদস্য সংখ্যা ও মূলধনের পরিমাণ সীমিত হওয়ার কারণে এ জাতীয় কোম্পানির আয়তন তুলনামূলকভাবে ক্ষুদ্র হয়ে থাকে । আইন অনুযায়ী এ কোম্পানির পরিচালকের সংখ্যা ন্যূনতম ২ হতে হবে । বাংলাদেশে প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে ।

 

(খ) পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি (Public Limited Company):

যে কোম্পানির সদস্য সংখ্যা সর্বনিম্ন ৭ জন ও সর্বোচ্চ সদস্য সংখ্যা কোম্পানির মারকলিপিতে উল্লিখিত শেয়ার সংখ্যা দ্বারা সীমাবদ্ধ এবং শেয়ার ও ঋণপত্র জনগণের নিকট বিক্রি করা যায় এবং শেয়ার অবাধে হস্তান্তরযােগ্য তাকে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি বলে । পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি প্রয়ােজনে মারকলিপিতে সংশােধনী এনে শেয়ার সংখ্যা বাড়িয়ে সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি করতে পারে । আইন অনুযায়ী এ কোম্পানির ন্যনতম ৩ জন পরিচালক থাকতে হবে ।

 

কার্যক্রমের ভিত্তিতে ব্যবসার ধরন কয়টি?
১) উৎপাদন মুখী, ২) সেবা মুখী, ৩) ট্রেডিং

 

আধুনিক ব্যবসাকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে;

১) শিল্প (Industry), ২) বাণিজ্য (Commerce), ৩) প্রত্যক্ষ সেবা (Direct Services)

 


১) শিল্প (Industry):

কাঁচামাল বা প্রাথমিক দ্রব্যকে কারখানাভিত্তিক প্রস্তুত প্রনালীর মাধ্যমে মাধ্যমিক বা চুড়ান্ত দ্রব্যের রুপান্তরের প্রত্রিুয়াকে শিল্প বলা হয়। অর্থাৎ যে প্রক্রিয়ায় প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ , কাচামালে রূপদান এবং প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে কাঁচামালকে মানুষের ব্যবহার উপযােগী পণ্যে পরিণত করা হয় তাকে বলা হয় শিল্প ।

আকারের ভিত্তিতে শিল্প চার প্রকার। যথা: ক)বৃহৎ শিল্প, খ)মাঝারী শিল্প, গ)ক্ষুদ্র শিল্প, ঘ)কুঠির শিল্প

 

২) বাণিজ্য (Commerce):

ব্যবসায় বা শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামাল উৎপাদকের নিকট পৌঁছানো কিংবা শিল্পে উৎপাদিত পণ্য বা সেবা সামগ্রী ভোক্তাদের নিকট পৌঁছানোর সকল কার্যাবলিকে বাণিজ্য বলে ৷ বাণিজ্য দুই ধরনের। যথা:  ১) অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য (খন একই দেশের দুটি অঞ্চলের মধ্যে পণ্যের বিনিময় হয়,তখন তাকে অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য বলে)  এবং ২) আন্তর্জাতিক বা বৈদেশিক বাণিজ্য (যখন দুই বা ততোধিক দেশের মধ্যে পণ্যের বিনিময়হয়, তখন তাকে বলে বৈদেশিক বাণিজ্য)। 

 

৩) প্রত্যক্ষ সেবা (Direct Services):

অর্থ উপার্জনের উদ্দেশ্যে স্বাধীন পেশায় নিয়ােজিত ডাক্তার , উকিল , প্রকৌশলী প্রভৃতি পেশাজীবীরা বিভিন্ন রকম সেবাকর্ম অর্থের বিনিময়ে প্রদান করে থাকেন । এ সকল সেবাকর্ম বা বৃত্তি প্রত্যক্ষ সেবা হিসেবে পরিচিত  যেমন: ডাক্তারি ক্লিনিক , আইন চেম্বার , প্রকৌশলী ফার্ম, অডিট ফার্ম ইত্যাদি । প্রত্যক্ষ সেবা আধুনিক ব্যবসায়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা ।

 

গ্রহণযোগ্যতা এবং পরিকল্পনা

ব্যবসার একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে  মুনাফা অর্জন করা, এটি কোনো চ্যারিটি নয়।  সুতরাং ব্যবসা শুরু করার আগেই বুঝতে হবে আপিন যে ব্যবসাটি করতে চাচ্ছেন তার গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু? তারপর পরিকল্পনা ঠিক করুন; যেমন ব্যবসার কার্যক্রম কি হবে? এটি কি ১) উৎপাদন মুখী ২) সেবা মুখী নাকি ৩) ট্রেডিং হবে? এরপর ঠিক করুন ধরণ নির্বাচর করুন যেমন (১) ব্যক্তি/একক মালিকানায় (Proprietorship) (২) যৌথ বা পার্টনারশীপ ফার্ম   এবং (৩) প্রাইভেট লিমিটেড  (Limited) কোম্পানি। আমরা নতুনদের জন্য ট্রেডিং এবং একক ব্যবসা উৎসাহ করি। ছোট পরিসর থেকে শিক্ষা নিয়ে আস্তে আস্তে বড় ব্যবসা শুরু করা যায়। 

 

একটি ব্যবসা শুরু করার জন্য কি কি প্রয়োজন?

(১) প্রথমেই পরিকল্পনা

(২) ব্যবসার কার্যাক্রম নির্ধারণ  (১) উৎপাদন মুখী (২) সেবা মুখী (৩) ট্রেডিং 

(৩) ব্যবসার ধরণ নির্ধারণ  (১) ব্যক্তি/একক মালিকানায় (Proprietorship) (২) যৌথ বা পার্টনারশীপ ফার্ম   এবং (৩) প্রাইভেট লিমিটেড  (Limited) কোম্পানি

(৪) ভাল একটি নাম নির্ধারণ

(৫) ব্যবসার নিবন্ধন (যদি পার্টনারশীপ/কোম্পানী হয়)

(৬) ট্রেড লাইসেন্স (সকল ধরনের ব্যবসার জন্য বাধ্যতামূলক)

(৭) ই-টিন (বাধ্যতামূলক)

(৮) ভ্যাট রেজিষ্ট্রেশন (বাধ্যতামূলক)

(৯) Import License (যদি আমদানীমূখী ব্যবসা হয়)

(১০) Export License (যদি রপ্তানীমূখী ব্যবসা হয়)

(১১) Bank Account

(১২) পণ্য, সেবা বা ব্যবসার নাম ট্রেডমার্ক নিবন্ধন